কৌতুহল
-শচীদুলাল পাল
জগতের সেরা জীব মানুষ। তাদের মস্তিষ্ক উন্নত। জানার ইচ্ছা থেকেই জ্ঞান আসে। ইচ্ছে শক্তির মধ্যেই রয়েছে কৌতুহল।
অজানাকে জানার অদেখাকে দেখার কৌতুহল মানুষের চিরন্তন । বিশাল এই পৃথিবীর চারিদিকে কত কি দেখার, জানার রয়েছে, কত রহস্য রয়েছে লুকিয়ে । সেই অপরিচয়ের দুস্তর মহাসমুদ্রের অদৃশ্য তরঙ্গ প্রতিনিয়ত আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে । সেই অজানাকে জানবার জন্যে আমাদের অসীম আগ্রহ, অনন্ত উৎকণ্ঠা । এই দুর্নিবার আকর্ষণে আমরা রুদ্ধ দুয়ার খুলে বের হয়ে পড়ি অজানার সন্ধানে ।
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী, মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরুভূমি, কতনা অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু রয়ে গেছে অগোচরে ।
শিশুর মনে নানান কৌতূহল। কৌতুহল থেকেই জ্ঞানার্জন। সেই শিশুই কৌতুহল থেকেই বিজ্ঞানী হয়, মঙ্গলে চাঁদে মানুষ পাঠায়।কৌতুহলের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। সে মুক্ত।ভাগীরথীর উৎস সন্ধানের কৌতুহল থেকেই গোমুখ পৌঁছে যাওয়া যায়।এভারেস্ট, থর মরুভূমি সাগর গিরি পাহাড় ডিঙিয়ে নিত্যনতুন স্থানে ভ্রমণে আগ্রহ জন্মে।
এই ভূখণ্ডকে জানবার জন্য কৌতুহল থেকেই দেশ ভ্রমণ । ইতিহাস ও ভুগোলের বাইরে অবাধ উন্মুক্ত খোলা আকাশের নিচে জীবন্ত দেশটি দেখে, তার অধিবাসীদের প্রত্যক্ষ স্পর্শ লাভ করে, তাদের জীবনধারা সম্পর্কে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি, সেই জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান ।
হৃদয়ের প্রসারতা ও মনের গতি আনে কৌতুহল । কৌতুহল আমাদের দেয় গতি, এই গতির আনন্দে মানুষ উষর মরু, উত্তাল সমুদ্রে পাড়ি দেয় । কৌতুহলে আবিষ্ট হয়ে দুর্লঙ্ঘ্য গিরিশৃঙ্গ অতিক্রম করে অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে গিয়েছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে । সুদূর চীন থেকে ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাঙ এসেছিলেন ভারতবর্ষে । অজানা দেশ জয়ের আনন্দে কলম্বাস জীবন বাজি রেখে পাড়ি দিয়েছিলেন । ভাস্কো-দা-গামা, কলম্বাস, মার্কোপোলো প্রমূখ বিখ্যাত বিখ্যাত পর্যটকগনের দুঃ সাহসিক কৌতুহলের ফলে আজ পৃথিবীর বহু দুর্গম দেশ-দেশান্তর মানুষের জ্ঞানের পরিধির মধ্যে এসে গেছে । আবিষ্কার করেছেন পৃথিবীর কত নামহীন গিরি-নদী, কত অজানা অরণ্য, মরুভূমি, কত তুষারাছন্ন মেরুপ্রদেশ। মানুষের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
মানুষের কৌতুহলের কোনো শেষ আছে?
“চাঁদটা কেন বাড়ে কমে জোয়ার কেন আসে? “গ্রহন কেন হয়?
মাটিতে আপেলটা কেন পড়লো?
ফুটন্ত জলে কেটলির ঢাকনাটা কেন ওঠানামা করছে?
বানর সেনা পাথর জলে ফেলে পাথর জলে ভেসেছিল! সেতুবন্ধন করেছিল?মঙ্গল গ্রহে জল, অক্সিজেন আছে। মানুষ আছে!
রোবোট কিভাবে কারখানায় কাজ করে। ব্যাঙ্কে টাকা গুনে দেয়?
মানুষ কেন পাগল হয়!
প্রতিবেশীর ঘরে ঝগড়া হচ্ছে। কিসের ঝগড়া।
মেয়েটির মৃত্যু স্বাভাবিক, হত্যা নাকি আত্মহত্যা?
অপারেশন এর পর লোকটা বাঁঁচবে কিনা!
চাকরির পরীক্ষা দিয়ে চাকরিটা পাবে কিনা!
ঘরের বউ স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোথায় যায়।ঘরে কে আসে?
স্বামী রাত জেগে কার সাথে হোটাস এপে চ্যাট করে।অশান্তির মূলে কে? রেশনের চাল কোথায় যায়? সন্তানটি কী কারো প্রেমে পড়েছে? ঈশ্বর আছেন তাকে জানার কৌতুহল থেকেই ঈশ্বর দর্শন হয়। সুতরাং কৌতুহলই সভ্যতার উন্নতির সোপান । কৌতুহলে মানব সভ্যতার একদিকে যেমন বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে অত্যধিক কৌতুলের জন্য সন্দেহবাতিকতাও সৃষ্টি হয়। মানসিক রোগের কারণ হয়।